"নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান,
বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।"
অতুলপ্রসাদ সেন
ভারতবর্ষকে বিশ্লেষণ করতে উপরিউক্ত বাক্যটিই যথেষ্ট। ভারত হল এক পবিত্র স্থান,বহুর মধ্যে একাত্বতাই হল এই স্থানের মহত্ব। বিভিন্ন সু ও কু বৈশিষ্ট্য মিলিয়েই সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্য।সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই দেশ খুবই বৈচিত্র্যময়।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুবিধামত পোশাক, খাদ্য ও বাসস্থানের যথাক্রমে রুচি,অভ্যাস ও পরিকাঠামোগত তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।সমাজবদ্ধ জীব মানুষ, জোট গঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্ভব ঘটায় বিভিন্ন নামের জাতি ও ধর্মের। যদিও সকলের গন্তব্য একই ছিল, তবু সেটি আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠল নানা নাম ও রীতির সম্ভারে।
বিভিন্ন ধর্মের মত বিভিন্ন রকম,যে যার আপন মহিমায় শ্রেষ্ঠ। পরস্পরের মধ্যে মতের আদান-প্রদান একে অপরকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তোলে। একইরকম ভাবে রীতিনীতি পালনের নানান রকমারি পন্থা সংস্কৃতির উন্নতি ঘটায়।ধর্ম ও সংস্কার সমগ্ৰ ভারতকে দুহাত ভরে সুন্দর, পবিত্র সংস্কৃতি দানে সক্ষম হয়।
কী,কেন, কিভাবে–এই সব প্রশ্নের ,উত্তর খুঁজতে আবির্ভাব হল বিজ্ঞান-এর। অনুভূতিকে সামান্য সরিয়ে রেখে যুক্তি দিয়ে সব ঘটনার ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের অগ্ৰগতির সাথে তৈরী হল নানা যন্ত্র। মানুষের কষ্ট লাঘব,সময় সঞ্চয় ও কার্যফল বৃদ্ধি পেতে থাকল এই অগ্ৰগতির সাথে তাল মিলিয়ে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের সমান্তরাল পথ চলা শুরু হল।
ভালো মন্দের মিশ্রণেই জগতের সবকিছু সুঠাম ভাবে গঠিত হয়। সংস্কারের সাথে কুসংস্কারের উপস্থিতি তাই আবশ্যক হয়ে পড়ে। সতীদাহ প্রথা, গঙ্গা সাগরে সন্তান বিসর্জন- এমনই কুসংস্কারের নিদর্শন বহন করে। নারীকে দমন করে অন্দর মহলে আবদ্ধ রাখাই উত্তম সংস্কৃতি বলে তখন বিবেচনা করা হত।নারীই যে 'মা', সেই কথা ভুলে যাওয়াটা এই পরিস্থিতির আসল কারণ।রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনী ঐ সমস্ত ঘটনার সাক্ষী তথা বার্তাবাহক। যদিও যুগের অগ্ৰগতির সাথে নারীর অবস্থার উন্নতি ঘটলেও অদৃশ্য সেই শিকলের বাঁধন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এর মতো বিজ্ঞানীর দেশও বিজ্ঞানের কুপ্রভাবের থাবা থেকে নিষ্কৃতি পায় না । ইন্টারনেট বা অন্য কথায় মোহময় ইন্দ্রজাল মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে মোবাইলমুখী করে তুলেছে।এই জালকে আঁকড়ে ধরে বর্তমান ভারত অগ্ৰগতির শিখরে পৌঁছতে চলেছে। তবু কুপ্রভাব পায়ে দড়ি বেঁধে উন্নতিকে, অবনতির দিকে টানতে দৃঢ় পরিকল্পনা করে রেখেছে। নানান অনৈতিক ও খারাপ কাজে এর ব্যবহার বাড়তেই চলেছে। মানুষের সুবুদ্ধি বিকাশ ও কু-ব্যবহারের অনুপাতে প্রথমটির দল খানিকটা ভারী। তাই আশা করাই যায়, এই সমস্ত কু-জিনিস অপসারিত হয়ে শুভ-বুদ্ধিরা স্থান গ্ৰহণ করে ভারতকে আরো বেশি বৈচিত্র্যময়, আনন্দময়, সুখময় ও শান্তিপূর্ণ পবিত্র স্থানে পরিণত করবে।
সোহিনী শবনম